"পাখিরে তুই ডালে বইছছ নি
আল্লার কাছে দুয়া কর আমার আব্বু আইবনি"
এটা আমার জীবনের প্রথম সেখা বাক্য। দাদুর কাছে শিখেছি।তাদের আদরের ছোট্ট ছেলের বড় নাতনী আমি।
জন্মের পর থেকেই শুনে আসছি বাবার রুপকথা।
বাবা নামের আত্নত্যাগ, বাবার আকাশজয়, আরব অরন্যে
বাবার পশু শিকার, বাগানের ফুলে ফলে বাবার একাকিত্ব বিলীন, মরুভূমিতে বাবার বুক ফাটা আর্তনাদ।
ছয় বছর অবধি বুঝতাম বাবা মানে আকাশে ভেসে বেড়ানো অমুল্য কিছু। আকাশপানে চেয়ে থাকতাম,,,,,, কখন পাখি উড়বে কখন বলব "যা পাখি উড়ে যা, বাবাকে নিয়ে আ"
হোক পাখি কিংবা আকাশযান চোখে পড়লেই হাত বাড়িয়ে দিতাম উর্দ্ধে। বাবার প্রয়োজন কতটুকু তা আজ জানি, কিন্তু তখন না জেনেই বাবার প্রতিক্ষায় আকাশবিলাস করে যেতাম।
একদিন দেখি মা একটা সাদা কাগজে কি যেন লিখছে, জিজ্ঞেস করল মা বলল আব্বুর সঙ্গে কথা বলছে। বুঝলামনা, মা বুঝিয়ে দিয়ে বলল -যখন তোমার আব্বুর সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করবে তখন একটা কাগজে সব লিখে পাখির কাছে দিয়ে দেবে, বলবে আকাশের টিকানায় পৌছে দিও, টিক আব্বুর হাতে।
সেদিন বুঝলাম মন দিয়ে লেখা পড়া করতে হবে, নয়ত আব্বুর সাথে কথা বলতে পারবনা।
শুরু হল লেখা পড়া,,,,,, পাতায় পাতায় আব্বু আব্বু আব্বু,
লুকিয়ে লুকিয়ে আম্মুর পত্র পরতাম আর নকল করতাম।
কদিন পর একটা পাতা আম্মুকে দিয়ে বল্লাম আব্বুকে দিও,
মনে আছে লিখেছিলাম
প্রিয় আব্বু
কেমন আছ এত্তদূরে
আমাকে ছেড়ে?
অনেকদিন পর আব্বুও লিখত অমন করে। চিঠিগুলো আজও পড়ি ছলছল চোখ নিয়ে। সেদিনের সেই লেখা আজকের ই-মেইল,চ্যাট আকাশ পাতাল ব্যবধান। জন্মের ছয়টি বছর পর প্রতিক্ষার অবসান হল!!!! কলসি নিয়ে ঘরে ফিরছি হঠাৎ কেউ বলল এই তোদের বাড়িতে মেহমান এসেছে। উঠোনে পা দিতেই দেখলাম অচেনা এক ভদ্রলোক দরজায় দাঁড়িয়ে। একটু কাছে যেতেই জল ভরা কলসি শুদ্ধ কোলে তুলে নিল, ভয়ে কি বা লজ্জায় জানিনা কলসি উপোড় করে দিলাম গায়ে সব জল ঢেলে!!!!
তখনও বুঝিনি এই সেই আকাশমানব। ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম, বাবার আদর পেয়ে ভুলে গেলাম পেছনের শুন্যতা, হয়ত বাবার ও। বাবার সাথে হল গভীর সখ্যতা, খাবারে,
খেলনাতে, বইয়ের পাতায় পাতায় বাবা কে মিশিয়ে নিলাম আপন করে। বাবা এখন খেলার সাথি, বন্ধু আমার।
বাবাকে ছাড়া কিছুই ভাবতে পারিনা। আনন্দের দিন এক নিমিষেই চলে যায় শুনেছি, এমনি হল। বাবার যাবার দিন ঘনিয়ে এল, আকাশ থেকে দূত এল।
আসি বলে কপালে আদর একে দিয়ে দুটি মিষ্টি উপদেশ দিয়ে চলে গেল। পাখির পাখায় ভর করে। কে দেখে আমার আত্নচিৎকার!!! কে দেখে হৃদয়ের হাহাকার। খুব ভালবাসি বাবাকে খুউউব। ব্যাথা পেলেই ছুটে যাই আমার প্রিয় বন্ধু কালনী নদীর তটে, ভাসিয়ে দেই ঢেউয়ে ঢেউয়ে, আব্বু তোমায় ছাড়া খুব কষ্ট হয়, ভালবাসি তোমায়, তুমি আমার পৃথিবী, শব্দগুচ্ছ গুলো। এভাবেই বাবা ঈদের খুশি আসে, আর যাবার সময় রেখে যায় পাহারসম ব্যাথা। কেউ দেখেনা প্রবাসীদের না বলা কষ্ট গুলো,আমি দেখি,। বাবার ভেজা চোখ দেখলেই বুঝে ফেলি দুঃখ আর সুখের জল কোনটা।
সেই ছোট বেলা থেকেই আমি বাবাভক্ত। আসলে কি আমার প্রায় চরিত্র অভ্যাস টিক বাবার ন্যায়। আর বাবাকে নিয়েই আমার জীবনে লেখা শুরু।
সাহিত্যরস আমার মাঝে নেই, নেই বাক্য মাধুর্য্যতা। তবুও লিখি, লিখে যাই বাস্তবতা। কিছু অনুভূতি বাবাকে ঘিরে।
আমার সকল পরামর্শদাতা, বিপদের বন্ধু, কাছের মানুষ, সবচেয়ে পছন্দের কেউ, উনি হলেন আমার বাবা।
আমার বাবা খুব মজার মানুষ, দেশে আসলে পুরোটা সময় আমাদের সাথে কাটায়। মজার মজার কথা বলে হাসিয়ে মারে। নানান ধরনের বাস্তবমুখী জ্ঞান বাবার কাছে শিখতে পারি। খুব মিস করি বাবাকে। তার অনুপস্থিতির সময়টা বড্ড কষ্ট দেয়।
আমার বাবার জন্য সবসময় দুয়া করি, বাবা যেন তার কষ্ট ত্যাগের উত্তম প্রতিদান পায় পরকালে।
হে খোদা তুমি আমার বাবাকে সুস্থ রেখো।
প্লীজ আমার বাবার জন্য সবাই দুয়া করবেন।
,,আব্বু আই লাভ ইউ,,
ইতি
তোমার মামনী
সুমাইয়্যা নিজামী তান্যি।